শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যা মামলার ৯নম্বর আসামি মো. সাগরের (২০) বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন তিনি। তবে খালাস পেয়েও খুশি না সাগর। তিনি ফিরে পেতে চান তার চাকরি। রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের দিন গত বছরের ২৬ জুন সকালেই পুলিশের কনস্টেবল পদে শারীরীক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার রেজাল্ট হাতে পান সাগর। এরপর ৩০ জুন বরগুনার পুলিশ নাইন্সে চাকরির জন্য মেডিক্যাল টেস্ট দিতে গেলে সেখান থেকেই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপর দীর্ঘ ১৫ মাসের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বেকসুর খালাস পান সাগর। এ অবস্থায় পুলিশের চাকরি ফিরে পাবে কি না সে বিষয়ে শঙ্কিত সাগর ও তার পরিবার।
সাগরের পিতা আ. লতিফ খান জানান, তিনি বরগুনার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের নিমতলী আজিজাবাদ সিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি অবসরে আসেন। অবসরে এসে চরম দারিদ্রের মুখোমুখি হন তিনি ও তার পরিবার। ছোট ছেলে সাগর ২০১৬ সালে নলী মুসলীম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৮ সালে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। এরপর একই কলেজে ডিগ্রি অধ্যায়নরত অবস্থায় অভাবের কারণে রাজধানী ঢাকার একটি গার্মেন্টে চাকরি নেয় সাগর। সেখানে চাকরিরত অবস্থায় বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে রাজধানী ঢাকা থেকে বাবার সাথে গত বছরের ২১ জুন লঞ্চযোগে বরগুনায় আসে। ২২ জুন তার শারীরিক, ২৩ জুন লিখিত ও ২৫ জুন তার মৌখিক পরীক্ষা হয়। ২৬ তারিখ সকালে বরগুনা জেলা পুলিশ অফিস থেকে পরীক্ষার রেজাল্ট পায় সাগর। উত্তীর্ণ ৪১ জনের মধ্যে সাগরের মেধাক্রম ছিল ১৮। এরপর রেজাল্ট নিয়ে ১১টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে থেকে বাড়ি ফেরার সময় সেখানে থাকা সিসি ক্যামেরায় তাকে দেখতে পাওয়া যায়। তখনও রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছুই জানত না সাগর। বাসায় ফিরে তিনি জানতে পারেন যে কলেজে মারামারি হয়েছে। আরো পরে তিনি জানতে পারেন রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের কথা।
বন্ডবাহিনীর ০০৭ গ্রুপের আহ্বানে সম্মতিসূচক সাড়া দেওয়ার বিষয়ে মো. সাগর বলেন, রাজধানী ঢাকায় গার্মেন্টে চাকরি করে ফেসবুক চালানোটা অত সহজ ছিলো না। মাঝে মাঝে তিনি ফেসবুক চালাতেন। তবে কে তাকে কোন গ্রুপের সদস্য করেছেন তা তিনি অতটা বুঝতেন না। তাছাড়া তিনি যখন কারাগারে ছিলেন তখনও তার ফেসবুক আইডি সচল ছিলো। সে আইডি থেকে তার মামাতো ও ফুফাতো বোনদের অনেক কমেন্টও করা হয়েছে। কিন্তিু কে বা কারা তার আইডি চালাতো তা তিনি নিজেও জানতেন না। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেও পুলিশ কোনো অভিযোগ নেয়নি বলে জানান সাগর।
পুলিশের চার্জশীটে সাগরের বিরুদ্ধে বরিশালে একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি দেখানোর বিষয়ে সাগর বলেন, সাগর নামের অপর আরেক জনের মামলাকে তার মামলা হিসেবে দেখিয়েছে পুলিশ। প্রকৃতপক্ষে ওই সাগর এবং তিনি ভিন্ন ঠিকানার ও ভিন্ন পরিবারের।
এ বিষয়ে সাগরের আইনজীবী অ্যাড. জুনাইদ জুয়েল বলেন, অনাকাঙ্খিত একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে বিনাদোষে সাগরের পুরো জীবনটাই এলোমেলো হয়ে গেছে। তার পুলিশর চাকরিটা ফেরত পাওয়ার জন্যে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে এ মামলার ৬নম্বর আসামি মো. মুসাও বেকসুর খালাস পেয়েছেন। মামলার শুরু থেকে রায় ঘোষণা হওয়ার দিন পর্যন্ত তিনি পলাতক ছিলেন। খালাস পাওয়ার পরে দুইদিন অতিবাহিত হলেও তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। মুসা বেঁচে আছে না মরে গেছে তাও কেউ বলতে পারছেন না। বলতে পারছেন না মুসার বাবা-মাও। মুসার বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার ৭ নম্বর সড়িষামুড়ি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেতমোড় গ্রামে। তার পিতা মো. কালাম খান ওরফে মাতবর খান একজন দরিদ্র দিনমজুর। বরগুনা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ধানসিঁড়ি সড়কের আনোয়ার মাস্টারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন মুসাসহ তার বাবা-মা। এসময় মুসার পিতা আব্দুল কালাম খান স্থানীয় একটি করাতকলে শ্রমিকের কাজ করতেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শৈশব থেকেই ছোট-খাটো চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো মো. মুসা। তার বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় মাদক ও অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বর্তমানে মুসার বাবা-মা বেতাগী উপজেলার সড়িষামুড়ি ইউনিয়নের বেতমোড় গ্রামের পৈত্রিক বাড়িতে অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে মুসার বাবা মো. কালাম খান ওরফে মাতবর খান (৬০) জানিয়েছেন, রিফাত হত্যাকাণ্ডের পরে পুলিশের ভয়ে মুসা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তারপর থেকে তাদের কারো সাথেই আর কোনো যোগাযোগ করেনি মুসা। সে এখন কোথায় আছে কী অবস্থায় আছে তা তারা কেউই কিছু জানেন না।
Leave a Reply